[১]
সূর্যসেন হলের লাদেনগুহাতে প্রচণ্ড হইচই, ঠিক প্রতিদিনের মত। রাত ১২ টা ৪০ বাজলেও এই ছেলেদের ঘুমানোর কোনো লক্ষণ নেই। তাদের চোখ থেকে ঘুম নামক অপরিহার্য বিষয় যেন কেউ কেড়ে নিয়েছে। ছেলেদের একটা গ্রুপ গান গেয়ে চলেছে,
“তুমি তামাক ধরো, তামাক ছাড়ো আগুন জ্বালিয়ে দাও!…”
আরেক গ্রুপ বসে বসে তাস পেটাচ্ছে, মাঝে মাঝে জোরে চিল্লিয়ে উঠছে। এটা সেটা বলছে। এ কথাগুলোর বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে নিষিদ্ধ শব্দের উচ্চারণ। এ অবস্থায় শোয়া থেকে হুট করে উঠে পড়ল নাফিস। চলে এলো হল মাঠের গোল চত্ত্বরে। পাম ট্রি গাছের নিচে ইট নির্মিত বেঞ্চে বসে পড়ল। খুব জোরে ঠান্ডা বাতাস বইছে আজ। এ বাতাস সবার আগে এসে লাগছে তার নাকের ডগায়। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র মুখে। অতঃপর তাকে অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। কি অদ্ভুত প্রশান্তি! এত সুন্দর আবহাওয়া তার মন শান্ত করে দিল। দূর করে দিল বিরক্তি।
এ আবহাওয়ায় নানা রকম ভাবনা উকি দিচ্ছিল মনে। ভাবছিল, ‘কলেজে থাকাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কত ফ্যান্টাসি ছিল আমার। দীর্ঘ তিন মাস প্রচন্ড পরিশ্রম করেছি যেন জ্ঞান সমুদ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতে পারি। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার জন্য হলে ভাল একটা রুম পাবো, লাইব্রেরি, রিডিং রুমে গিয়ে পড়াশুনা করব নিয়মিত। আমার পছন্দের বিষয় বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকব ঘন্টার পর ঘন্টা। আর এখন? আশ্রয় হয়েছে লাদেনগুহায়, কি অসহ্য পরিবেশ!’
এসব ভাবতেই নাফিসের মুখে ফুটে উঠল রুক্ষ হাসি। ‘কি ভেবেছিলাম, আর কি পেলাম! এ বাস্তবতা আগে জানলে হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এতটা প্রচেষ্টা করতাম না’, মনে মনে বলছিল নাফিস। ভাবতে ভাবতে ঘুম চলে এসেছে চোখে। আজকে আর লাদেনগুহায় যাবে না সে। এতক্ষণে ওর ঘুমানোর জায়গা অন্য কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে হয়ত! খামোখা আরেকজনের ঘুম ভেঙ্গে কাজ নেই। এখানেই শুয়ে পড়ি..
-এই যে ভাই! শুনছেন! ভাই!!
-কে?!
হুড়মুড় করে উঠে জিজ্ঞেস করল নাফিস। বা হাতের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল রাত ৩.৫৫ বাজে।
-আমি আহনাফ আনিস। ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। তোমার নাম কী?
-জ্বি ভাই! আস সালামু আলাইকুম! আমি নাফিস, প্রথম বর্ষের..(একটু ভয়ার্ত কন্ঠে)
-আমাকে দেখে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমাকে সালাম না দিলে অন্য সিনিয়রদের মত খবরদারি করব না। কোনো ভয় নেই। তুমি এখানে কেন?
-আসলে গণরুমে ঘুমানোর জায়গা নেই, তাই ভাবলাম এখানেই ঘুমাই।
-ও আচ্ছা…
– কিন্তু ভাই, আপনি এত রাতে….
-আমি তাহাজ্জুদ পড়তে মসজিদে এসেছি। অযু করতে গিয়ে দেখলাম কেউ একজন শুয়ে আছে। এসে দেখি আপনি শুয়ে আছেন, আর আপনাকে মশায় কামড়াচ্ছে। তাই রুম থেকে কয়েল এনে ধরিয়ে দিলাম। এখন আপনি শান্তিমত ঘুমাতে পারবেন।
এ কথা বলে তৃতীয় বর্ষের আনিস ভাই সালাম দিয়ে বিদায় নিলেন। চলে গেলেন মসজিদের বারান্দায়। তাহাজ্জুদ সালাত শুরু করলেন। দূর থেকে আনিস ভাইয়ের সালাত আদায়ের দৃশ্য দেখছে নাফিস। সে অনুভব করল, তার দেখা সেরা সালাতের দৃশ্য এটি। এতে রয়েছে আল্লাহর প্রতি বিনয় ও আনুগত্যের ছাপ। দুই ঘন্টা পর। মাথায় ঠান্ডা হাতের অনুভূতি পাচ্ছে নাফিস। চোখ খুলে দেখল, সেই তাহাজ্জুদগুজার ভাইটি, একটু আগে যিনি কয়েল ধরিয়ে দিয়ে গেছেন।
-আস সালামু আলাইকুম ভাই! আপনি আবার, কিছু হয়েছে?
-ওয়া আলাইকুম সালাম। কিছু হয় নি। একটু পর ফজর শুরু হবে, তোমাকে নামাজের দাওয়াত দিতে আসলাম। চল, নামাজটা পড়ে আসি।
-না ভাই, আজকে ইচ্ছে নেই। অন্যদিন পড়ব।
আনিস ভাই আবারও অনুরোধ করে বললেন, ‘চলো যাই, ফজরটা পড়লে দেখবে অনেক ভাল লাগবে তোমার।’ ‘না ভাই, আজকে নাহ! অন্য কোনো দিন পড়ব।’ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে জানালো নাফিস। আনিস ভাই ‘আচ্ছা ভাই, ঠিক আছে’ বলে মসজিদে রওয়ানা দিলেন। আর নাফিস? সে আবার শুয়ে পড়ল ইট নির্মিত বেঞ্চের উপর।
[২]
সোমবার, রাত ১০ টা। গেস্টরুম প্রোগ্রাম চলছে। হঠাৎ কোনো এক সিনিয়র ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলেন,
-এই নাফিস কই রে! সামনে আয়!!.
নাফিস সামনে গিয়ে দুই পা সোজা করে, হাত দুটো ঠিকভাবে রেখে মাথা নিচু করে দাড়ালো। ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাই বললেন,
-এই তোর সমস্যা কী রে! বড়ভাইদের চোখে দেখোস নাহ? চোখ কি বাড়িতে রেখে আসছিস নাকি?
-জ্বি না ভাই।
-আবার না বলিস! সালাম দেস নাই ক্যান? বড়ভাইদের সালাম দিতে হবে জানোস না?
-জ্বি ভাই, জানি।
-অমুকের পোলা! (গালি) আবার কথা কস! বড় ভাইদের সালাম দেস না! একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো! যা, তুই এখন হল গেইটে গিয়ে দাঁড়াবি। সামনে যারে পাবি তারেই সালাম দিবি। এটাই তোর শাস্তি।
আরেক ভাই মাঝখান থেকে বলে উঠলেন,
-আজকের প্রোগ্রামে গেছিলি? তোরে তো দেখলাম না!
-না ভাই, ক্লাস ছিল।
-অই! আমাদেরও তো ক্লাস ছিল! আমরা কিভাবে গেলাম? এই! তুই আজকে হলে ঘুমাবি না। সারারাত বাইরে থাকবি। হলে দেখলে তোরে একদম বাইর কইরা দিমু হল থেইকা! আর হ্যা! এখন হল গেইটে যা, সবাইরে সালাম দিতে থাকবি। কেউ যেন বাদ না পড়ে!
হল গেইটে দাঁড়িয়ে সালাম দিচ্ছে নাফিস। যাকে পাচ্ছে তাকে। সালাম দিতে নাফিসের অসুবিধা নেই। কিন্তু এভাবে বাধ্য করা, ধমকানোর ব্যাপারটাতে নাফিস খুব ছোট অনুভব করছে। তার গলা শুকিয়ে গেছে ভয়ে। একই সাথে সে ভাবছে, আজকে রাত সে কোথায় থাকবে। সিনিয়র ভাইরা যদি তাকে হলের আশেপাশে দেখে তাহলে আবার ধমকাবে, মারতেও পারে।
এ অবস্থায় হঠাৎ করেই নাফিস দেখল, সেই তাহাজ্জুদগুজার ভাইটি হলে ঢুকছেন। সে তাকে এড়িয়ে যেতে চাইল। কিন্তু সম্ভব হলো না! ভাইটিই আগে সালাম দিয়ে কাছে এসে মুসাফাহা করলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
-হল গেইটে দাড়িয়ে আছো, কারো জন্য অপেক্ষা করছো নাকি?
-না ভাই! গেস্টরুমের বড় ভাই গেইটে দাড়িয়ে সবাইকেই সালাম দিতে বলছে।
-ও আচ্ছা! খুব বাজে অবস্থা তাহলে। এশার নামাজ পড়েছো?
-না ভাই। পরে পড়ে নিবো।
-ঠিক আছে ভাইয়া, পড়ে নিও কিন্তু..
কথাবার্তা শেষ করে আনিস ভাই চলে গেলেন। আনিস ভাইয়ের সাথে কথা বলে মনটা হালকা হলো নাফিসের। লোকটা আসলেই চমৎকার। সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকে। যতদিনই তাকে দেখেছে, হাসিমুখেই দেখেছে। তার একটা শাস্তি শেষ হয়েছে। ইয়ারমেট দিয়ে খবর পাঠানো হয়েছে আর সালাম দিতে হবে না কাউকে। তবে আজকে রাতে যেন হলে না ঘুমায় সে। হলে দেখলে আর জীবনে হলে থাকতে দেয়া হবে না তাকে। সিনিয়ররা কঠিন শাস্তি দিবে..
শেষ রাত। আনিস ভাই বের হয়েছেন তাহাজ্জুদ পড়তে। আজকে নাফিস পাম ট্রি গাছের নিচে শুয়ে নেই। সালাত শেষ করে লাদেন গুহায় উঁকি দিলেন। এখানেও নেই নাফিস। ‘কোথায় গেল ও? কোনো সমস্যা হয় নি তো?’, চিন্তায় পড়ে গেলেন আনিস ভাই। তাহাজ্জুদ পড়ে দু’হাত তুলে দোয়া করছেন তিনি,
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সকলের নিরাপত্তা দানকারী। আপনিই রিজিকদাতা, আপনিই সফলতা-ব্যর্থতা দিয়ে থাকেন। আজকে ছোট ভাই নাফিসকে দেখতে পাচ্ছি না। জানি না সে কোথায় কি করছে। আপনি সবকিছু জানেন ও শোনেন। আপনি জানেন সে কোথায় আছে। হে আল্লাহ! আপনি তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিন। তাকে আপনার দ্বীনের জন্য কবুল করুন।
ইয়া আল্লাহ! সমস্ত মাজলুমদের উপর আপনার অনুগ্রহ নাযিল করুন। জালিমদের হিদায়াত নসীব করুন। আমাদের জন্য এমন এক ব্যবস্থা উপহার দিন, যার ভিত্তি হবে ইনসাফ। যেখানে দুর্বলের উপর সবলের জুলুম নেমে আসবে না। মাজলুমের উপর জালিমের জুলুম যেখানে ঠাই পাবে না..”
এভাবেই অশ্রুসিক্ত চোখে কায়মনোবাক্যে মহান রবের দরবারে আর্জি পেশ করছেন আনিস ভাই। পরদিন সকালে নাফিস হলে ফেরার পথে আনিস ভাইয়ের সাথে দেখা। ভাই জিজ্ঞেস করলেন গতকাল রাতে সে কোথায় ছিল। ‘জসীমউদ্দিন হলে আমার এক বন্ধুর ওখানে’, জানাল নাফিস।
[৩]
আনিস ভাই যেখানে পান, উত্তম আচরণের সাথে নাফিসকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু এ দাওয়াতে কোনো পরিবর্তন আসছে না তার জীবনে। নামাজের দাওয়াত দিলে বলে, ‘পরে পড়ব’। কখনো দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে খানিকটা রেগেও যায় সে। কি এক পরিবর্তন!
তার আশ্রয়স্থল ‘লাদেনগুহা’র পরিবেশ যেন তার মন তালাবদ্ধ করে ফেলেছে। তার মন-মস্তিস্ক শান্তি চায়, কিন্তু শান্তির আশ্রয়স্থল খুজে পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। কেমন যেন হয়ে গেছে ও। নিজের মত চলে। লাদেনগুহার বিশৃঙ্খল পরিবেশ তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। সে-ও এখন দলবেঁধে গান গায়। রাত-বিরাতে ঘুরাফেরা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া তাস পেটানোতেও তার দক্ষতা অনেক ভালো এখন। এসব কিছুতে সে জীবনকে উপভোগ করতে চেষ্টা করে। নিজের ফ্রেন্ডদের উপর ডমিনেট করতেও শিখে গেছে এখন। সেও এখন অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করে। গালি দেয়। অন্যের সাথে খারাপ আচরণ করে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি অবলম্বন করে। তার মানসিকতা হল, এভাবে না চললে সে শান্তিতে থাকতে পারবে না। হল লাইফে কেবল নিচু হয়েই থাকতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ৭-৮ মাসে এমনই পরিবর্তন হয়ে গেছে নাফিস। কলেজ জীবনে তার নামাজ মিস হতোই না খুব একটা। মাঝে মাঝে তাহাজ্জুদও পড়তো। কিন্তু এখানে আসার পর! পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে পেরে উঠে নি সে। নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছে এই অন্ধকার পরিবেশের সাথে। প্রথম দিকে পাম ট্রি গাছের নিচে বেঞ্চে বসে বাতাসের স্নিগ্ধতা অনুভব করত। ঘুমাতো। কিন্তু এখন? সেখানে বসে বসে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে ঘন্টার পর ঘন্টা। কখনো সিগারেট খায় বসে বসে। কিন্তু সে বুঝতে পারে না, তার জীবন ধীরে ধীরে সিগারেটের কালো ধোয়ার মতই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। ধোয়া যেমন বাতাসে মিলিয়ে যায় ধীরে ধীরে, ঠিক তেমনই তার ইতিবাচক গুনাবলী হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে…
আনিস ভাইয়ের দ্বীনের দাওয়াত নাফিস সেভাবে গ্রহণ করে নি। কখনো নামাজ পড়তে বললে পড়ে, বেশিরভাগ সময়ই বলে, ‘পরে পড়ে নিব’। কখনো তো নামাজের দাওয়াতে বিরক্তও হয়ে পড়ে সে। কঠোর ভাষায় দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে সে। তবে আনিস ভাই! তার এত ধৈর্য যে তিনি এসব আমলে নিয়ে সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেন নি। নাফিস তার দাওয়াত বার বার প্রত্যাখ্যান করে। আর তিনি বার বার হাসিমুখ নিয়ে দাওয়াত দিয়েই চলেছেন।
প্রথম বর্ষের রেজাল্ট দেয়ার পর নাফিসের মন খারাপ হলো খুব। একটা কোর্সে ফেইল করেছে সে। হলের নোংরা রাজনীতি, অসৎসঙ্গ তাকে বুঝতেই দেয় নি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার উদ্দেশ্য পূরণ করা হচ্ছে না তার। ‘আমি তো পড়ালেখার কথা ভুলেই গিয়েছি। কিভাবে ভালো রেজাল্ট হবে! এসেছি কি করতে, আর করছি কি!’ সিগারেটে টান দিতে দিতে নিজেকে বলল নাফিস।
আজকের গেস্টরুমে হাজির সবাই। সিনিয়ররা রেজাল্ট জিজ্ঞেস করছে,
-কিরে ডিপার্টমেন্টে কার রেজাল্ট কেমন? ফার্স্ট হয়েছিস কে কে?
নাফিসের চার জন ইয়ারমেট হাত তুলল। নাফিস দূর থেকে তাকিয়ে দেখল, সব থেকে সাদাসিধা ছেলেরাই ভাল রেজাল্ট করেছে। যাদেরকে ঝারি দিলে চুপ করে থাকে, টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দিলে চাওয়ার সাহস পায় না, তারাই আজকে ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট..
ভাইরা এবার জিজ্ঞেস করল,
-ফেইল করেছিস কে কে?
কেউই হাত তুলল না। যারা ফেইল করেছে, তারা হাত তুলতে লজ্জা পাচ্ছে। ফলে বড় ভাইয়ের ধমক,
-এই অমুকের পোলা!(গালি), ফেইল করছিস তো কি হইছে? তোর সিনিয়র ভাইদের অনেকেই ফেইল করছিল। তো কি হইছে? তারা রাজনীতি করছে, হলে পোস্টেড এখন। পুরা হল তার নামে কাঁপে! বুঝছিস!! সবাই পড়ালেখা কইরা চাকরি করব না। অনেকে নেতাও হইব। হাত তোল কে কে ফেইল করছিস! হাত তোল!!
নাফিসের সাথে ৮-৯ জন হাত তুলল। এরা সবাই ফেইল করেছে। নাফিস নিচের দিকে তাকিয়ে হাত তুলেছে। তার মনটা বেশি খারাপ। স্কুল ও কলেজ লাইফে সবসময় ফার্স্ট ছিল সে। কখনোই সেকেন্ড হয় নি। কিন্তু আজ? আজ তার হাত তুলতে হচ্ছে ফেইল করা ছাত্র হিসেবে! তার মনটা এজন্যই বিষন্ন। এ সময় এক বড় ভাই নাফিসকে ডেকে বললেন,
-এই নাফিস! সামনে আয়!!
-জ্বি ভাই।
-তোর মন খারাপ ক্যান? রেজাল্ট খারাপ হইছে দেইখ্যা?
-না ভাই (নাফিস লুকাতে চেষ্টা করল)
-তাইলে হাসি দে।
নাফিস কি করবে বুঝতে পারছিল না। সে মুচকি হাসি দেয়ার বৃথা চেষ্টা করল। আর তা দেখে সিনিয়ররা সবাই হো হো করে হেসে উঠল…
গেস্টরুমে এমন ঘটনার পর সে গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দিল। কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না। একটু পর কল ব্যাক আসল। গার্লফ্রেন্ড জানালো তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এক সরকারী চাকুরিজীবীর সাথে। বলল, ‘আমি আমার মা-বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি অনেক। কান্নাকাটি করেছি, রাগ করেছি। কিন্তু তারা মানেন নি। তারা এখনই বিয়ে দিতে চান আমাকে। আমি তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। এখন এ সম্পর্ক রাখা আর সম্ভব নয়।’
দুঃখিত কন্ঠে মেয়েটি বলল, ‘নাফিস, তুমি আমাকে ভুলে যাও। এটাই বাস্তবতা ছিল। মেনে নিয়ে নিজের জীবনকে সুন্দর করে সাজাও।’ নাফিসের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। তার চোখ লাল হয়ে গেছে। কপালের রগ ফুলে উঠেছে। রাগ আর কষ্টে সে ইট নির্মিত বেঞ্চে ঘুষি মারছিল… তার জীবনে একইসাথে দুটি কষ্ট নেমে এসেছে। প্রথম সেমিস্টারে ফেইল করেছে, কিভাবে মা-বাবাকে জানাবে এ খবর!
আর এ খারাপ সময়েই গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সে নিতে পারছে না আর! পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরাল। আজ সে খুব জোরে সিগারেট টানছে। কষ্টে, রাগে, ক্রোধে তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সিগারেট খাওয়ার মাধ্যমে সে যেন চাইছে সিগারেটের ধোয়ার সাথে এ কষ্টগুলো মিলিয়ে যাক। সে বুঝছে না যে কষ্ট দূর করার এ পদ্ধতি সঠিক নয়। বরঞ্চ এটি তার ক্ষতিই করছে। ধ্বংস করছে তার ফুসফুস। যা তাকে ক্রমেই নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে..
এমন মুহুর্তে আনিস ভাই এসে হাজির। সেই চির চেনা অসাধারণ সুন্দর হাসিমুখে সালাম দিয়ে পাশে বসলেন তিনি। নাফিসের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কি হয়েছে?’ ‘কিছু না ভাই। তেমন কিছু না’, চোখ মুছতে মুছতে বলল নাফিস।
আনিস ভাই বললেন, ‘আমার মনটাও আজ তেমন ভালো নেই। তাই ভাবলাম তোমার সাথে বসে একটু গল্প করি। তোমাকে আজকাল পাওয়া যায় না, মন খুলে একটু আড্ডা দিবো, কথা বলব, সে সুযোগ আর হয়ে উঠে না’, হতাশ ভঙ্গিতে বলে চলেছেন আনিস ভাই।
নাফিস আজকে তার কথায় মনোযোগ পাচ্ছে। মনে হচ্ছে আনিস ভাইয়ের কথাগুলো একদম হৃদয়ের মাঝখান থেকে আসছে। তার কন্ঠ ভারি, তবে দৃঢ়তায় পরিপূর্ণ। আনিস ভাই বলছেন,
‘আমার জন্মের ৫ বছর পর আব্বা ইন্তেকাল করেন। আমাদের অর্থ-সম্পত্তি ছিল না তেমন। বলতে পারো আমরা দরিদ্রই। আম্মা অনেক কষ্টে আমাকে বড় করেছেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এই তো সেদিনও! আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখনও আম্মা এভাবে কাজ করতেন। আমার পড়ালেখার খরচ জোগাতে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। আব্বা তাকে অসিয়ত করেছিলেন, আমার পড়াশুনা যাতে কোনোভাবে বন্ধ না হয়। স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠে আমি উপলদ্ধি করি, আম্মার এভাবে কাজ করা উচিত নয়। আমার কিছু করা উচিত। চিন্তা-ভাবনা করে একটা কোচিং সেন্টার খুলে ফেললাম কয়েকজন মিলে, ‘মেধা বিকাশ কোচিং সেন্টার’। ক্লাস ওয়ান থেকে টেনে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতাম আমরা। সেখান থেকে খুব ভাল ইনকাম হতে থাকে। এতে আমাদের অভাব খানিকটা ঘুচে যায়।’
নাফিস মাঝখানে বলল, ‘আপনার আম্মা অনেক কষ্ট করেছেন আপনার জন্য।’
‘হ্যা। তিনি সত্যিই অনেক কষ্ট করেছেন। না খেয়ে থেকেছেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন। আম্মা একটু আগে আমাকে জানালেন তিনি অসুস্থ। তাই আমার মনটা বেশ খারাপ। ভাবলাম তোমার সাথে একটু কথা বলি..’ ‘তা তোমাকে খুব বিমর্ষ লাগছিল। চোখ লাল দেখা যাচ্ছে। কি হয়েছে? কোনরকম সংকোচ ছাড়াই আমাকে বলতে পারো’, আনিস ভাই জিজ্ঞেস করলেন নাফিসকে।
নাফিস সব ঘটনা খুলে বলল। প্রথম সেমিস্টারে ফেইল করা, পলিটিক্যাল বড় ভাইদের ঠাট্টা-অপমানের বিষয়সহ গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হওয়ার বিষয়টি বিস্তারিত জানাল নাফিস। ‘পলিটিক্যাল বড় ভাইরা তোমার সাথে যে আচরণ করেছেন তা দুঃখজনক’, আনিস ভাই বললেন। ব্রেকাপ বিষয়ে কিছু বললেন না তিনি। তিনি চান না এ বিষয়ে সরাসরি এখনই কোন কিছু বলতে। এটা তার দাওয়াতি কৌশল।
আনিস ভাই হঠাৎ বললেন, চলো বাইরে হাটতে হাটতে কথা বলি। বাইরে বেরিয়ে আনিস ভাই গল্প করা শুরু করলেন,
-তুমি কি উম্মে সালামা (রা.) এর নাম শুনেছ?
-না, শুনিনি।
-ও আচ্ছা, তাহলে শোনো,
‘উম্মে সালামা (রা.) ছিলেন নবিজি (সা.) এর স্ত্রী, আমাদের মা, উম্মুল মুমিনিন। তিনি ছিলেন মুহাজির নারী ও একজন শহীদের স্ত্রী। তার স্বামী শাহাদাতবরণের পর তিনি নবিজি (সা.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তো একদিন তার আগের স্বামী আবু সালামা (রা.) খুব হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেই উম্মে সালামা (রা.) কে ডেকে বললেন, তুমি কি জানো, আমি নবীজি (সা.) কে কি বলতে শুনেছি? তিনি বলেছেন, যেকোনো সময়ে যেকোনো ব্যক্তি কোনো মুসীবতে আক্রান্ত হল এবং সে আল্লাহর নিকট এই দু’আ করে তবে আল্লাহ তাকে আরো উত্তম কিছু দান করবেন, যা তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। বান্দার কাছ থেকে যা কেড়ে নেয়া হয়েছে, আল্লাহ তার থেকে ভালো কিছু দান করে তা পূরণ করবেন। আর এ দু’আটি কি?-
“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসীবাতি ওয়াখলুফলি খাইরান মিনহা”
“হে আল্লাহ! এই মুসীবতের বিপরীতে আমাকে পুরস্কার দান করুন। অন্যকথায়, মুসীবতের সময় ধৈর্যধারণের জন্য আমাকে অনুগ্রহ করুন। যা আমার নিকট থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে, তার পরিবর্তে আরো ভালো কিছু দান করুন।”
-নাফিস! তুমি কি আমার কথা শুনছ নাকি কোনো কিছু ভাবছ?
-না, কিছু ভাবছিনা। আমি শুনছি আপনার কথা।
-শোনো তাহলে, ঘটনা এখানেই শেষ নয়-
‘উম্মে সালামা (রা.) এর স্বামী পরবর্তীতে উহুদ যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন। তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠেন নি। দিন দিন তার পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে এবং একপর্যায়ে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। তার শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে উম্মে সালামা (রা.) মনের অজান্তেই স্বামীর শেখানো সেই দোয়া পড়ে ফেললেন। দোয়া পাঠ শেষে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ভাবলেন, আবু সালামার থেকে ভাল মানুষ আর কে হতে পারে? তিনি স্বামী হিসেবে শ্রেষ্ঠ স্বামী ছিলেন। তার মত উত্তম কেউ হতে পারে না। তার স্বামীর শাহাদাতের পর অনেক বিখ্যাত সাহাবী তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। কিন্তু উম্মে সালামা (রা.) সেগুলো নাকচ করে দেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তিনি আবু বকর (রা.) ও উমার (রা.) এর মত বিখ্যাত সাহাবীদের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
পরবর্তীতে নবিজি (সা.) তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। কিছু কথাবার্তা হওয়ার পর তিনি নবিজি (সা.) এর প্রস্তাবে রাজি হন। নবিজি (সা.) তাকে বিয়ে করে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠা নারী, উম্মুল মুমিনিনদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর উম্মে সালামা (রা.)ও পান এমন একজন স্বামী, যিনি পৃথিবীর সর্বোত্তম ব্যক্তি। (মাদার্স অফ দ্য বিলিভার্স, ১১ নম্বর লেকচার, ইয়াসির ক্বাদি)
শোনো নাফিস, উম্মে সালামা (রা.) ভেবেছিলেন, আবু সালামা (রা.) এর চেয়ে ভাল স্বামী আর কেউ হতে পারে না। তিনি তখন নবিজি (সা.) এর কথা ভাবেন নি। কিন্তু দেখো, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছেন। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিকে তার স্বামী বানিয়ে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। নাফিস! তুমি হয়ত ভাবছো গার্লফ্রেন্ড হারিয়ে তুমি একদম নিঃস্ব হয়ে গেছো। তার থেকে উত্তম নারী আর কেউ নেই। কিন্তু আল্লাহ চাইলে তার থেকে উত্তম কাউকে তোমার জীবনসঙ্গিনী বানিয়ে দিবেন, যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। সুতরাং, যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট, বিপর্যয়ের সময় সর্বপ্রথম আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে আমরা এ দোয়া পাঠ করব, যা উম্মে সালামা (রা.) কে তার স্বামী শিখিয়েছিলেন। আর হ্যা, মনে রাখবে, মহান আল্লাহ বিবাহ বহির্ভূত যাবতীয় সম্পর্ক আমাদের জন্য হারাম করেছেন।
-নাফিস, যদি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করো, তবে আরো কিছু কথা তোমাকে বলতে চাই।
-ভাই বলুন। আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগছে আমার। আমার খুব হালকা অনুভব করছি।
– তাহলে শোনো,
তোমার প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছে। কেন খারাপ হয়েছে তার কারণ খুজে বের করো। তুমি দেখবে, যাবতীয় অসুবিধা, নেতিবাচক পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে আরেকটি কারণ রয়েছে। তা হলো অলসতা, টাইম ম্যানেজমেন্টে অদক্ষতা, অনিচ্ছা। লাদেনগুহায় থেকেও তো অনেকে ফার্স্ট হয়েছে। তাদের লাইফস্টাইলের দিকে তাকাও। দেখবে, এত এত ঝামেলার মধ্যেও তারা পড়াশোনার সময় বের করে নেয়। কৌশল অবলম্বন করে কোন সময় কিভাবে কাজে লাগানো যায়। তারা প্রচেষ্টা করেছে ভাল রেজাল্ট করার। এজন্যই তারা ভাল করেছে। তবে হ্যা! রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বলে অতিরিক্ত হতাশ হয়ো না। হ্যা! আত্মসমালোচনা থাকবে। তবে হতাশ হয়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। হিজরতের ঘটনা জানো না?
কাফির-মুশরিকরা নবিজি (সা.) ও আবু বকর (রা.) কে খুজতে খুজতে সে গুহার সম্মুখ পর্যন্ত চলে আসল, যেখানে তারা লুকিয়ে ছিলেন। আবু বকর (রা.) এতে ভীত হয়ে পড়লেন, যদি ধরা পড়ে যান! নবিজি (সা.) বললেন, চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। তাছাড়া মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আমাদের হতাশ হতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না’। (সূরা যুমার, আয়াত ৫৩)
তোমার প্রতি আমার পরামর্শ হল, সামনের সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করবে। টাইম ম্যানেজমেন্টে সচেতন হবে। আল্লাহ যেসব ইবাদত তোমার জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন, সেগুলো আদায় করবে। বাড়ির মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখবে বেশি বেশি। তাহলে হতাশা তোমাকে ছেয়ে ফেলতে পারবে না।
তুমি যদি সত্যিকারের আলোক প্রত্যাশী হও, তবে আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই আলোর পথ দেখাবেন। ‘আমার কথা শেষ। ওই তো যায় চা-ওয়ালা মামাকে দেখা যাচ্ছে। চলো চা খাই’, বললেন আনিস ভাই। চা খেতে খেতে আরো আরো কিছু কথাবার্তা হলো তাদের দু’জনের। চা খাওয়া শেষে নাফিস অবচেতনভাবে চা-ওয়ালাকে বলে ফেলল,
‘মামা! ব্যানসন দেন পাঁচটা….’
কথাটা বলেই থমকে গেল নাফিস। বলল, ‘না মামা! সিগারেট লাগবে না। ছেড়ে দিবো সিগারেট।’ নাফিসের সিগারেট ছেড়ে দেয়ার কথা শুনে আনিস ভাই বললেন, ‘আল্লাহ যেন তোমাকে সাহায্য করেন।’
চা খাওয়া শেষে হলে ফেরার সময় আনিস ভাই কিছু ইসলামী গান শেয়ার করলেন নাফিসের ফোনে। বললেন, অবসরে যেন এগুলো শুনা হয় আনিস ভাই বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর নাফিস পাম ট্রি গাছের নিচের সেই বেঞ্চে বসল। আজকেও শীতল বাতাস বইছে। আনিস ভাইয়ের কথা তার হৃদয়কে শীতল করেছে, আর বাতাস শীতল করে দিচ্ছে তার শরীরকে। নাফিস এখন বেঞ্চে বসে ভাইয়ের দেয়া গানগুলো শুনবে । কানে ইয়ারফোন লাগাল সে। ভাইয়ের দেয়া গানগুলো থেকে একটা গান ‘প্লে’ করতেই বেজে উঠল,
“অবুঝ মন নিয়ে, একটি সবুজ ছেলে এসেছিল এই ক্যাম্পাসে,
প্রতিকুল দাবদাহে পুড়েছে হৃদয় তার, অস্থিরতার ক্যানভাসে….”
এ গানের সাথে যেন তার নিজের জীবন মিলে যায়। নাফিস অনুভব করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিকূল দাবদাহে তার হৃদয় পুড়ে গেছে। তার হৃদয়ের ক্যানভাস শুধু অস্থিরতার নির্বাক চিত্রে ভরা।
এ গান শেষ হলে আরেকটি গান শুরু হলো। সে গানে বলা হচ্ছে,
“আলোকের সন্ধানী কোনো মন, পেয়ে গেলে আলোকের সন্ধান,
ফিরে যেতে চায় কি সে আধারের পথে আর,
যদি না সে হয় কভু নিষ্প্রাণ…”
নোট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের থাকার জন্য নির্ধারিত অন্যতম গণরুমের নাম ‘লাদেনগুহা’। লাদেনগুহার পরিবেশ পরিস্থিতি কেমন, তা গল্পেই উল্লিখিত হয়েছে।