যৌনতা একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু সিনেমা বা নাটকে যৌনতার উপস্থাপনের নামে নারীকে খোলামেলা ভাবে নিয়ে এসে ইরোটিজমকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। একজন টিনেজ নারীকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগার সময় আমরা তার হাতে নারীকে পণ্য হিসেবে তুলে দিচ্ছি। একজন টিনেজ যখন রাস্তার মোড়ে বিলবোর্ডে একজন নারীর শরীরের ৪০% এর বেশি দেখে, তখন সে মনের ভিতর বাকি ৬০% ও কল্পনা করার চেষ্টা করে।
টিভিসি গবেষণা সংস্থা থেকে টিভিতে চলমান ৪৩২ টি বিজ্ঞাপনের কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ৩৯৩ টি বিজ্ঞাপনে নারীকে অর্ধনগ্ন করে উপস্থাপন করা হয়েছে। খুব খেয়াল করলে দেখা যায় নারীরা যখন তার বাহিরের চাকচিক্যটা বাড়িয়ে নিজেকে পেশ করছে তখন খুব ভালো মূল্যায়ন পাচ্ছে। তার দিকে ক্যামেরা ধরা হচ্ছে, অনেক মানুষ তাকে চাইছে, তখন এই চাওয়া টা তার কাছে অনেক বড় হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবে সে মনে করে আমি পেয়েছি। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না সে আসলে কত টা এক্সপ্লয়েটেড হয়ে এই জায়গাটিতে এসেছে।
উনিশ শতকে নারী বন্দি ছিলো রান্না ঘরের বন্দিশালায়, আর এখনকার যুগের নারী বন্দি তার নিজ শরীরের নজরদারীতে। অনেক নারী শরীর উপস্থাপন করাকে আর্ট হিসেবে দেখেন। নারী যদি মনে করে আমি প্রকৃতিগত ভাবেই সুন্দর। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সুন্দর বানিয়েছেন। তাই আমি বাজারে বিক্রি হবো বেশি। তাহলে এটা হবে তার জন্য লজ্জার।
আমাদের চারপাশে নারীকে ভোগবাদী দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী একজন মেয়ের সেক্স আ্যপিল টা কতটুকু আছে তাকেই বড় করে দেখা হচ্ছে এবং নারীও চেষ্টা করছে তার সেক্স আ্যপিল টা কে কিভাবে বাড়াতে পারে। ঠিক এই ভোগবাদী প্রবণতার মধ্যে যে টিনেজ বেড়ে উঠে, সে নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবেই দেখে। তখন তার ভিতর অজান্তেই ঐ আচরণ তৈরি হয়ে যায়। আর এতে করে সে নারীকে শুধু মুভিতে নয় বাস্তবেও তেমন খোলামেলা করে পেতে চায়। এতে করে সমাজে অন্যায় কার্যক্রম গুলো দিনে দিনে বাড়ছেই।
এসব থেকে রক্ষার জন্য ধর্ম নারীকে ঢেকে রাখতে বলছে, অপরদিকে পুঁজিবাদ তাকে শো’ করে টাকা কামাতে চাচ্ছে। পুঁজিবাদী সমাজে বোরকা, পর্দা হয়ে যায় নিপীড়নের প্রতীক। অনেক বেশি খোলা মেলা হয়ে যায় মুক্তির প্রতীক। কিন্তু আল্টিমেটলি পুঁজিবাদী সমাজে নারী তার শরীর থেকে কখনোই মুক্তি পায় না। সে ভোগের পণ্যই থেকে যাচ্ছে। যৌনতার সুশীল রিপ্রেজেন্টাশন বন্ধ করা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা বৈ মুক্তি মিলবে না সত্য।