আরবীতে একটা কথা আছে, “আগনাস সাবা আনীল মিসবাহ”, যার মানে হলো, “সময়টা যখন সকাল, আপনার বাতির প্রয়োজন নেই”। ঠিক তেমন, আপনার কাছে যদি থাকে আল কোরআন, আপনার আর কবিতার বইয়ের প্রয়োজন নেই!
কুর’আন তার সৌন্দর্যে চিত্তবিমোহনকারী, শব্দের দিক থেকে সম্মোহ সৃষ্টিকারী, বাণীর দিক থেকে প্রবলতর শক্তিশালী, সঙ্গতি ও ঐকতানের দিক থেকে মন্ত্রমুগ্ধকারী এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দিক থেকে আশ্চর্যতর। আল কুরআন পড়ার পর আপনি এতোটাই বিমহিত হবে যে, আপনি বলতে বাধ্য হবেন- কুর’আন মানবিক শব্দ হতে পারে না, এটা অসম্ভব, মানুষের পক্ষে এভাবে বর্ণনা করা কখনই সম্ভব নয়। কোরআনের বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য হলো -এর সাহিত্য মান। সেই সঙ্গে ভাষার লালিত্য, অপূর্ব রচনাশৈলী, বর্ণনার নৈপূণ্য, ভাবের গাম্ভির্য, সাবলীল ও চিত্তাকর্ষক গাঁথুনী।
মূসা আলাইহিস সালামকে নদীতে নিক্ষেপের কথা আমরা জানতে পারি কোরআন হতে। শিশু মূসা আলাইহিস সালামকে নদীতে নিক্ষেপের পর, তার মায়ের হৃদয়ের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, “সকালে মূসা জননীর হৃদয় অস্থির হয়ে পড়লো। যদি আমি তার হৃদয়কে দৃঢ় না করে দিতাম, তবে তিনি মূসা জনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেন। দৃঢ় করলাম, যাতে তিনি থাকেন বিশ্বাসীদের মধ্যে।” (সূরা-কাসাস: ১০)
নিজের প্রিয় সন্তান মূসাকে নদীতে নিক্ষেপের পর মায়ের হৃদয় ছিল চিন্তা উৎকন্ঠায় অস্থির। তখন তার হৃদয়ের অবস্থা বুঝাতে আল্লাহ যে শব্দটি ব্যাবহার করেন তা হল “فُؤاد” যার অর্থ “হৃদয়”। ফুয়াদ(فُؤاد) শব্দটি এসেছে ف ء د থেকে। যার অর্থ জ্বলন্ত, অগ্নিদহ মাংসপিণ্ড। মহান আল্লাহ এই একটি শব্দ দিয়েই কত গভীর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন মূসা নবীর মায়ের হৃদয়ের অবস্থা।
আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ বলেন “যদি আমি তার হৃদয়কে দৃঢ় না করে দিতাম, তবে তিনি মূসা জনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেন”। এই বাক্যে হৃদয় বুঝাতে যেই শব্দটি ব্যাবহৃত হয়েছে তা হল “قلب” যার অর্থ “হৃদয়”। ক্বলব শব্দটি এসেছে “ق ل ب” হতে যার অর্থ “নরম মাংসপিণ্ড যা পাম্পিত হচ্ছে” অথবা “একটি মাংসপিণ্ড যা অনুভূতি বহন করে”।
আল্লাহ তার ইচ্ছায় মূসা আলাইহিসসালাম এর মায়ের হৃদয়ে প্রশান্তি দিয়ে দিলেন। আর তখন হৃদয়ের অবস্থা বুঝাতে ব্যবহার করলেন “قلب” শব্দটি। একই আয়াতে আল্লাহ হৃদয় বুঝাতে ব্যবহার করলেন দুইটি শব্দ। যখন হৃদয় ছিল অস্থিরতা উৎকণ্ঠায় ভরপুর তখন ব্যবহার করলেন “ফুয়াদ” আর যখন হৃদয়কে আল্লাহ করে দিলেন শান্ত তখন ব্যবহার করলেন “ক্বলব” আহ! কত সুন্দর কাব্যিক শব্দ চয়ন।
আমি কবিতা পড়তাম, কারণ আমি শব্দের প্রেমে পড়েছিলাম। তাই আজ কোরআন পড়ি।