জীবনে উন্নতি করতে বা জীবন বদলাতে ৩টি জিনিস সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে
১. পরিশ্রম (Skill/Labour)
২. ভাগ্য (Luck)
৩. বিশেষ সুবিধা (Unfair Advantage)
১.পরিশ্রম (Skill/Labour)
পরিশ্রম ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়, উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছে দেখবেন, আরেকটু ভালোভাবে দেখুন যে তার পূর্বপুরুষ এই সম্পদ পরিশ্রম করেই উপার্জন করে রেখে গেছে। আল্লাহ বলেন মানুষের চেষ্টা/শ্রম ব্যতীত কিছুই নেই। হ্যাঁ পরিশ্রম করার পর কেউ হয়তো এক বছরে যা উন্নতি করেছে আবার কারও লেগে যায় সারা জীবন এখানে পার্থক্য হলো কাজ শিখে দক্ষ হয়ে পরিশ্রম অথবা কম দক্ষতার পরিশ্রম। দক্ষতা অর্জনও পরিশ্রমেরই অংশ। আপনি দক্ষ হলে যে কাজ ১ ঘন্টায় করতে পারবেন অদক্ষ কারও হয়তো ১০ ঘন্টা লেগে যাবে। আপনি পরিশ্রম করার পরও যথেষ্ট উন্নতি করতে পারছেন না, ভেবে দেখুন আপনার শ্রম কোথায় দিচ্ছেন, ভালো জায়গায় শ্রম দিলে ভালো ফল আসবে এটাই স্বাভাবিক আর এই যে কোথায় শ্রম দিলে ভালো হবে এটা জানাও জ্ঞানার্জন ও দক্ষতারই অংশ।
২. ভাগ্য (Luck)
কেউ কম পরিশ্রমে বেশি পায় কেউ বেশি পরিশ্রমেও কম পেতে পারে এটাই ভাগ্য। অনেক ডিমান্ডিং সাবেজেক্টে পড়েও অনেকে আশানুরূপ জব পায় না আবার সাধারণ সাবজেক্ট ও সিজিপিএ পেয়েও অনেকে ভালো জব পায়। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির একজন উদ্যোক্তো ব্যবসার যে সুবিধা পায় আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলের একজন উদ্যোক্তা ব্যবসায় ততটা সুবিধা পায় না। বিল গেটস এমন স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন যেখানে সেকালে কম্পিউটার ছিলো যা অন্যান্য অনেকের ভাগ্যে জোটেনি, আবার বিল গেটসের সময়ে যারা ঐ স্কুলে পড়েছেন সমান সুবিধা পেয়েও সবাই কিন্তু বিল গেটস হয়ে উঠতে পারেননি। বুঝতেই পারছেন শুধু পরিশ্রম বা শুধু ভাগ্যের আশায় বসে থেকে সব হয় না।
আবার কেউ কম সম্পদে সুখী হয় কেউ বেশি সম্পদেও সুখ পায় না এটাও ভাগ্য ও চরিত্রের ফল হয়ে থাকে। ইলন মাস্ক না হলে আপনি সফল নাহলে ব্যর্থ, ব্যপারটা এমনও না। আপনি কঠোর পরিশ্রম করে চলার মত ইনকাম করছেন আর কিছু সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি ভাইরাল হয়ে লাখ টাকা ইনকাম করছে এটাও কোনো আফসোসের বিষয় না। ঠিকভাবে পরিশ্রমের পরও ভালো ফল পাচ্ছেন না, হতাশ হবেন না, আল্লাহ হয়তো এটাই চান যে আপনি যে অবস্থায় আছেন সেটাই আপনার জন্য ভালো বা আপনার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। “হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৬]
এ অবস্থায় করণীয়- পরিশ্রম অব্যহত রাখুন আর বেশি বেশি দোয়া করুন। আলী ইবন মুহাম্মদ (র)…. সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন নেককাজ ব্যতীত অন্য কিছুতেই আয়ু বৃদ্ধি পায় না এবং দু’আ ব্যতীত তকদীর পরিবর্তন হয় না। আর পাপাচারের কারণেই মানুষকে তার জীবিকা থেকে বঞ্চিত করা হয়। সুনানে ইবনে মাজা’, ইফা নং ৯০
৩. বিশেষ সুবিধা (Unfair Advantage)
পরিশ্রম এবং দক্ষতা ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ বৈধ/অবৈধ সুবিধা, কোটার জোর বা কারো পৃষ্ঠপোষকতা উন্নতি ও অবস্থার পরিবর্তন তরান্বিত করতে পারে। এটা সবাই পায় না। কারো মামা চাচা খালু মন্ত্রী এমপি হলে বা মন্ত্রী এমপির লোক থাকলে সে বিশেষ সুবিধা পায়, কেউ বিশেষ নেতার সুদৃষ্টি পেয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। হ্যাঁ বিশেষ সুবিধা অবশ্যই আপনাকে বদলে দিতে পারে তবে সেটা সবসময় বৈধ হয় না। তাতে সুখও থাকে না। সেটা টেকসইও হয় না, এই বিশেষ সুবিধার পরিণতি একসময় খুবই দুর্দশার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
দেশে চাকরি বা কাজের অভাব যেমন আছে, অসম প্রতিযোগিতা আছে, তেমনি রয়েছে দক্ষ মানুষেরও অভাব । অন্যদিকে অ্যাকাডেমিক লেখাপড়াও একজন শিক্ষার্থীকে পুরোপুরি কর্মউপযোগী করে গড়ে তুলছে না। তাই বাড়তি লেখাপড়া ও দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন পড়ে। মনে রাখবেন দক্ষ মানুষেরা অলস বা বেকার বসে থাকে না। পরিশ্রমী ও দক্ষ মানুষের জন্য আল্লাহ কোনো না কোনো উপায় বের করে দেন।
অভিজ্ঞতা নেই তাই কাজ পাচ্ছেন না? আসলে অভিজ্ঞতাই দক্ষতা বাড়ায় তাই লজ্জা না করে প্রয়োজনে ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন, ছোট অভিজ্ঞতা আপনার বড় কাজের দ্বার খুলে দেবে। আপনার অভিজ্ঞতার কারণে কাজই আপনাকে খুঁজে নেবে।
স্কুল, কলেজ, মাদরাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়, আপনি যে ক্যাটেগরিরই হোন না কেন এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ হওয়ায় যেসব বেসিক দক্ষতা সবসময় সব জায়গাতেই কাজে লাগবে-
ক. কম্পিউটার চালানো
খ. মাইক্রোসফট অফিস (বাংলা, ইংরেজি টাইপিং, এক্সেল)
গ. ইংরেজি বুঝতে, লিখতে ও টুকটাক বলতে পারা
আরও একটু অ্যাডভানস্ কিছু যদি শিখতে চান তাহলে শিখুন নীচের যেকোনো একটা বা একাধিক:
ক. গ্রাফিক ডিজাইন: ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ফিগমা
খ. ভিডিও এডিটিং: ক্যাপকাট, প্রিমিয়ার প্রো, ডাভিঞ্চি রিজলভ, আফটার ইফেক্টস
গ. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: HTML, CSS, Javascript, PhP, Python
ঘ. ডিজিটাল মার্কেটিং/এসইও
ঙ. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং
সর্বোপরি রিজিক বৃদ্ধি বা উন্নতির জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল সা: চমৎকার কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলাও আমলে নেওয়া দরকার:
১. দোয়া করা:
তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সূরা আল মুমিন: ৬০)
২. নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা:
যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো, (সুরা ইবরাহিম : ০৭)
৩. আল্লাহর উপর ভরসা করা:
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট’(সূরা তালাক্ব, আয়াত: ৩)
যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’(তিরমিজি: ২,৩৪৪; ইবনে মাজাহ: ৪,১৬৪)
৪. তাক্বওয়া অবলম্বন করা:
আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না ।”(সুরা সাদ, আয়াত: ৩৫)
৫. ইস্তিগফার/তওবা করা
‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন (সুরা নুহ: ১০-১২; সুরা ওয়াকিয়া: ৮২)
৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা:
পিতামাতা, স্ত্রী সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের দায়িত্ব যদি আপনার থাকে তাহলে তাদের রিজিক আল্লাহ আপনার মাধ্যমে পাঠাবেন এতে স্বাভাবিকভাবেই আপনার উপার্জন বা সম্পদ বেড়ে যাবে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং আয়ু দীর্ঘ করা হোক—সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’(বুখারি: ৫,৯৮৫; মুসলিম: ৪,৬৩৯)
৭. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় এবং দান-সদকা করা:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করে। তাদের একজন বলে, হে আল্লাহ! দানকারীকে তার দানের জন্য উত্তম প্রতিদান দিন। অপরজন বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (বুখারি: ১,৪৪২, মুসলিম: ১,০১০)
তাই আপনি কী সুবিধা পাননি, কে আপনাকে সহযোগিতা করেনি, আপনার বাবার কেন অঢেল সম্পদ নেই, আপনার কেন মামা খালুর জোর নেই, এসব আফসোস ঝেড়ে ফেলে আজই নিয়ত করুন, কোনো দক্ষতা অর্জন করুন, কাজ শুরু করুন, কাজ না জানলে শিখে নিন, ইনশাআল্লাহ সফল হবেন।
‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
দ্বীনদারি মানে এই নয় যে আপনি উপার্জনের চিন্তা করবেন না, হালাল উপার্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন না। বরং মনে রাখবেন একজন মুমিনের ক্যারিয়ার হলো দ্বীনদারি ও সাথে হালাল উপার্জন। দ্বীন, ইবাদত ও চরিত্র বিসর্জন দিয়ে দুনিয়াবি প্রাচুর্য অর্জনের প্রতিযোগিতা মুমিনের ধ্বংস ডেকে আনে। একজন মুমিন ও মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভকেই শুধু চূড়ান্ত সফলতা হিসেবে মেনে নিয়ে খুশি হতে পারে।